বেশ কয়েকদিন থেকে ঘরের দরজা লাগিয়ে কি যেন ব্যস্ততায় কাটছে প্রহর ভোলা মিয়ার ।যেখানে দিনে ১০কাপ চা আর ২০টি বিড়ি পানে অনেকটা সময় অতিবাহিত করতেন বাড়ির পেছনের পতিত অংশে শাকসবজির চাষ করে কিছুটা পয়সা বাঁচানোর চেষ্টা করতেন।
ভোলা মিয়ার ব্যস্ততার অবসান হয়েছে ।তার ভাব খানা এমন যেন কিছু গুপ্তধন পেয়েছে কথাই কথাই গুনগুন করে গান গাইছেন তিনি ।একটু সুযোগ পেলেই জানতে চাইছেন কাল টাকা তো সাদা করা সহয কিন্তু কাল পয়সা সাদা করব কি ভাবে ? বয়সের ভারে ভোলা মিয়ার বুদ্ধিলোপ পেয়েছে ভেবে কেউ তার কথাই কেউ গুরুত্ব দেয়না ।
সকলেই ভোলা মিয়াকে এড়িয়ে চলছে নিঃসঙ্গতাই কাটছে প্রহর তার ।সবচেয়ে প্রিয় ছোট ছেলেটাও কেমন যেন বদলে গেছে ।অনেক রাতে বাড়ি ফেরে সকাল ৯টা ১০ টার আগে ঘুম থেকে উঠে না ,তার চোখের কনে কে যেন কৃষ্ণ আলপনা এঁকে দিয়েছে ।গোল্ড লিফ সিগারেট , মিষ্টি ,দুধ চা যেন তার চির সঙ্গী ।বড় ছেলের রক্ত পানি করা পয়সায় ছোট ছেলেকে মোটর সাইকেল কিনেদিয়েছিল ভোলা মিয়া যেন কলেজ যাবার সুবিধে হয় ।কিন্তু সেই মোটর সাইকেল নাকি হারিয়ে গেছে ।আজ কাল সে ভোলা মিয়াকে ধমক দিয়ে কথা বলে ।বয়সের খোটা দেয় বলে “আজ বাদে কাল মরবে এত কিসের প্রশ্ন ?’
ভোলা মিয়া অশ্রু সংবরন করতে পারেনা । প্রতিবেশীদের একটি শব্দ তার বুকে দাগ কাটে ‘তোমার ছেলে নষ্ট হয়ে গেছে ।’সশব্দে বলতে পারেনা আর ভোলা মিয়া মুক্তি যোদ্ধার সন্তান কখন নষ্ট হতে পারেনা আর যদি সে নষ্ট হয়ে যায় যে ভাবে অস্ত্র ধরে ছিলাম ১৯৭১ এ ঠিক সে ভাবে নিজের ছেলের বুকে অস্ত্র ধরতে আমি পিছপা হবনা ।
বড় ছেলেকে অভিযোগ করেও কোন লাভ হলনা ভোলা মিয়ার ।ছোট ভাই বাসার কম্পিউটার টি বিক্রি করেছে শুনে বড় ভাই খুশি হয়ে বলে ‘ও ঠিক ই করেছে যার ভাই বিদেশে থাকে তার ডেক্সটপ নয় ল্যাপটপ প্রয়জন ও কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হলে আমার যে কত ভাল লাগবে তোমাকে বোঝাতে পারবনা আমার সুখ তো তোমাদের নিয়ে তোমরা সুখে থেক তোমাদের জন্ন্য ২০০০০ টাকা পাঠালাম ’ভোলা মিয়ার কান্নার শব্দ বড় ছেলের কানে পোঁছাই বড় ছেলে কান্নার সঠিক কারন বুঝে উঠে না আবার ও ফান করে বলে বাবা আমি নতুন কড়করে সাদা টাকা পাঠিয়েছি তো ব্যাংক এ ও বলেদিয়েছি তোমাকে নতুন কড়করে টাকা দিতে ।
ভোলা মিয়া শুধু বলে তুই দেশে চলে আয় বাবা ।
বড় ছেলে বলে ভাইটা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হলে আসব ।সবার সামনে ভাব নিব আমি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারের ভাই ।ও… তুমি কি টাকা সাদা করেছো ?
-করেছি প্রায় ৫ দিন ধরে রঙ করে করে সাদা করেছি ।আমি মুক্তি যোদ্ধা আমি কি কাল টাকা সাদা না করে থাকতে পারি ।
-হাসতে হাসতে বলে কত টাকায় রঙ করেছো ?
-৫লক্ষ
-তুমি একি করেছো, টাকা গুলত তো একটাও কাজে লাগবেনা ।
-তুই তো বলেছিলি সাদা রঙ করে কাল টাকা সাদা করা যায় ।
-তোমাকে আমি কতবার বলেছি আমাদের কোন কাল টাকা নেই ,তুমি বিশ্বাস করছিলেনা আমার কথা তাই মজা করে বলেছিলাম কাল টাকা সাদা রঙ করে সাদা করতে হয় । ভয় নেই বাবা এ কথা কারো সামনে বলনা নয়ত তোমাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে ।ভাল থেকো বাবা , আমি তোমাকে ভালো বাসি তুমি ব্যাংক থেকে টাকা তুলে এনে সাদা রঙ করার ব্যাস্ততায় দিন কাটালে আমি এতেই খুশি । ৫ লক্ষ টাকা তো তোমার মুখের হাসির চেয়ে দামী নয় বাবা । তোমার মনে আছে বাবা ছেলে বেলায় তোমার ১০০ টাকা চুরি করেছিলাম । তুমি টাকা টি খুঁজতে খুঁজতে পাগল প্রায় হয়ে গিয়েছিলে তখন আমি তোমাকে বলেছিলাম বাবা টাকাটি আমি চুরি করে ছটকুকে দিয়েছি । তুমি বলেছিলে তোর বাবার টাকা মানে তো তোরই টাকা নিজেকে চোর ভাবছিস কেন ? আমার সব কিছু তো তোদের ই , তোদের আমি খুব ভালবাসি খোকা খুব ভালবাসি । ভোলা মিয়ার চোখ ছলছল হয়ে উঠে , হাসিমাখা মুখটা মলিন হয়ে গেছে , একটি ইটের টুকরো দিয়ে মাটিতে দাগ কেটে কেটে লিখছে সে ১৯৭১ সাদা মনেই যুদ্ধে গিয়েছিলাম । ২০১৪ প্রতিদানে বড় ছেলে আমার সুসন্তান জানতে পারলাম ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।